শ্রীনগরে বন্যায় দিশেহারা পানিবন্দী মানুষ

Taijul Islam Uzzal
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ০৯:৪৭ PM, ২২ জুলাই ২০২০

তাইজুল ইসলাম উজ্জ্বল :

শ্রীনগরে করোনা ভাইরাস আতঙ্কিত মানুষগুলো এখন বন্যায় দিশেহারা। গত কয়েকদিনের বন্যা পরিস্থিতির আরোও অবনতি হয়েছে। এতে করে উপজেলার বাঘড়া, ভাগ্যকুল, রাঢ়ীখালসহ বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৪ হাজার মানুষ বেশ এখন পানিবন্দী হয়ে পরেছে। এর মধ্যে বাঘড়া ও ভাগ্যকুলে প্রায় ৩ হাজার মানুষ এখন গৃহবন্দী।

এছাড়াও উপজেলার সদর ইউনিয়নের হরপাড়া, পাটাভোগের জুশুরগাঁও, বটতলা, কুকুটিয়ার খোদাইবাড়ি, রানা, সিন্দুরদী, বিবন্দী, দত্তগাঁওসহ বিভিন্ন স্থানে মানুষের চলাচলের প্রায় রাস্তাই বন্যার পাœতে ডুবে গেছে। পানি বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকলে পুরো উপজেলা বন্যা কবলিত হয়ে পরার আশঙ্কা করা হচ্ছে। করোনার পাশাপাশি বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি এখানকার মানুষের চরম ভোগান্তীর সৃষ্টি করছে।

অপরদিকে বন্যার পানিতে রোগ বালাই ছড়ানোসহ স্বাস্থ্য ঝুঁকি পরেছে পানিবন্দী মানুষ। এছাড়াও খাদ্য সংকটের মধ্যে দিয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে এখানকার নি¤œ আয়ের কর্মহীন পরিবারগুলোর। একই সাথে করোনাকালীন ও বন্যা পরিস্থিতি এই অঞ্চলের মানুষে মনে আসছে ঈদুল আযহার আনন্দ উৎসবও বিলীন হতে যাচ্ছে। হাজার হাজার মানুষ এখন দিশেহারা হয়ে পরেন। অন্যদিকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যা কবলিত এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে সরকারি ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, গত কয়েকদিনের টানা অতিবৃষ্টির কারণে গত মঙ্গলবার থেকে বুধবার পর্যন্ত এলাকায় বন্যার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে উপজেলার বাঘড়া ইউনিয়নের প্রায় রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়িতে কোমর পানি। ভাগ্যকুলেও পদ্মার তীরবর্তী এলাকার ঐতিহ্যবাহী ভাগ্যকুল বাজার ও এর আশপাশের কয়েকটি স্থান বন্যায় প্লাবিত হয়েছে।

বিশেষ করে ঢাকা-দোহার সড়কে আল-আমির বাজারের সামনে পানির তোরে সড়ক ভেঙে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়াও ওই এলাকার পদ্মার তীর ঘেসা মান্দ্রা এলাকায় বেরী বাঁধে বড় বড় ফাটল ধরতে দেখা গেছে। বাঁধের এক ফুট নিচে পদ্মার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। যদি কোনও কারণে বাঁধটি ভেঙে পরে তাহলে ভাগ্যকুলসহ বেশ কিছু এলাকা ডুবে যাওয়ার আশঙ্কায় এলাকাবাসী চিন্তিত।

এছাড়াও উপজেলার অন্যাণ্য ইউনিয়নেও বন্যার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রায় রাস্তাই এখন পানিতে ডুবে গেছে। অনেকাংশেই বাড়ির আঙ্গিনায় পানি দেখতে পাওয়া গেছে। এতে করে সবজি চাষী, আখ চাষী ও মাছ চাষীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ দিশেহারা হয়ে পরেছেন। বানের পানিতে তাদের জমির ফসল ভেসে তাদের ব্যাপক লোকসানের মুখ দেখতে হচ্ছে।

আরো লক্ষ্য করা যায়, বাঘড়ার অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাট স্থলে এখন কোমর পানি। ভাগ্যকুলের পশুর হাট নিয়েও ইজারাদারের দুশ্চিন্তার শেষ নেই! পানিবন্দী অনেক পরিবার বাড়ির আঙ্গিনায় কোমর পানিতে কলার ভেলায় করে তাদের সাংসারিক কাজকর্ম সারছেন! স্থানীয়রা জানান, করোনা ও বন্যার সার্বিক পরিস্থিতিতে তারা এখন দিশেহারা। বর্তমান পরিস্থিতিতে আসছে ঈদুল আযহার আমেজ নেই তাদের মধ্যে। তারা বলেন, দুর্যোগ মোকাবেলায় পরিবার পরিজন নিয়ে পানিবন্দী হয়ে মানবেতর দিন যাপন করছেন।

এব্যাপারে শ্রীনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোসাম্মৎ রহিমা আক্তার জানান, এপর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ২৩টি গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এতে করে প্রায় ৪ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পরেন। দুর্যোগ মোকাবেলায় ১১ টি আশ্রায় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকা পরির্দশন করছি। দুর্যোগ মোকাবেলায় সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের মধ্যে ২০ মেট্রিক টন সরকারি চাল, ডাল, তৈল, শুকনো খাবারসহ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে। ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। বন্যা মোকাবেলায় সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

আপনার মতামত লিখুন :