ভূল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগে হসপিটাল সিলগালা

আসাদউজ্জামান
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ০৮:২৯ PM, ১৫ এপ্রিল ২০২৪

মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার কলমা ইউনিয়নের বাসিরা গ্রামের বাসিন্দা লিটন দোকানদার(৪০)শনিবার (১৩ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে বুকে ব্যাথা অনুভব হলে তাৎক্ষনিক চিকিৎসার জন্য বালিগাঁও বাজারের ডক্টরস হসপিটালে আসেন। কর্তব্যরত ডা. মোঃ শরিফুল ইসলাম কোনো রকম পরিক্ষা-নিরিক্ষা ছাড়াই নার্সকে নির্দেশ করেন রোগীকে ইনজেকশন প্রয়োগ করতে। তখন রোগী নিজেই ইনজেকশন দিতে বারণ করলেও কর্তব্যরত চিকিৎসক রোগীর বারণকে তোয়াক্কা না করে নার্সকে দিয়ে পরপর চারটি ইনজেকশন প্রয়োগ করান রোগীর শরীলে। ইনজেকশন প্রয়োগের পর রোগীর শারীরিক অবস্থা অবনতি হলে রোগীকে ঢাকা রেফার্ড করা হবে বলতে বলতেই রোগী ব্যাথার যন্ত্রণায় দাপিয়ে মৃত্যুবরণ করলে ডা. শরিফুল ইসলাম তাৎক্ষণিক হসপিটাল থেকে পালিয়ে যায়।

রোগীর স্বজনদের সুত্রে জানাযায়, ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় লিটন দোকানদার মারা গেছে। তিনি রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকার কাপড়ের ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি অত্র এলাকার মধ্যে একজন নম্র ও ভদ্র মানুষ ছিলেন। তার একমাত্র আয়ে সংসার চলতো, তার মৃত্যু অকল্পনীয়। তার মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে হসপিটালে ছুটে গিয়ে দেখি হসপিটালের সামনে থানা পুলিশ ব্যারিকেট দিয়ে রেখেছে, গেইট আটকিয়ে রেখেছে আমাদের ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। ভেতরে প্রবেশ করতে চাইলে পুলিশ জানায়, ‘ভেতরে ঢুকার পার্মিশন নাই, ঢুকতে পারবেন না। ওসি স্যারের নির্দেশ আছে কাউকেই ভিতরে ঢুকতে দেয়া হবে না- যারা আছে ভিতরে তারাই থাকবে ভিতরে অন্য কেউ ঢুকতে পারবে না’।

রোগী মৃত্যুর ঘটনার সংবাদ পেয়ে হসপিটালে ছুটে আসেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. প্রণয় মান্না দাস। তিনি হসপিটালে এসে হসপিটালের মালিক পক্ষ বা ডাক্তার নার্স কাউকেই পাননি এবং রোগীর লোকের কোনো লিখিত অভিযোগ না থাকায় তিনি ঘটনাস্থল তথা ডক্টরস হসপিটালটিতে সিলগালা করে দিয়ে যান।

নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে চাচাতো ভাই সাকিব বলেন, আমার চাচাতো ভাই লিটন দোকানদার। হঠাৎ ঘাড়ে ও বুকে ব্যাথা উঠলে তাকে চিকিৎসার জন্য বালিগাঁও ডক্টরস হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়। ডিউটি ডাক্তার কোনোরুপ পরিক্ষা- নিরিক্ষা না করেই নার্সকে পরপর চারটি ইনজেকশন দিতে বললে আমার ভাই সাথে সাথে বারণ করেন ইনজেকশন দিতে। তবুও বারণ না শুনে নার্স পরপর চারটি ইনজেকশনই তার শরীলে প্রয়োগ করলে তার জ্বালাপোড়া ভাইয়ের অবস্থা আরো খারাপ হলে ডাক্তার বলেন ঢাকা রেফার্ড করা হবে, বলার সাথে সাথেই আমার ভাই মারা যান। এবং ডাক্তার বলেন আমি একটু আসতেছি বলেই ডাক্তার সেখান থেকে পালিয়ে যান। তার কিছুক্ষন পর হসটিটালের সকল স্টাফ ও মালিকপক্ষ পালিয়ে যায়। আমার ভাইকে অযথা ইনজেকশন দিয়ে হত্যা করা হলো এবং থানা পুলিশ, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আসলেও আমরা ভাই হত্যার কোনো সু-বিচার পেলাম না। আল্লাহর কাছে বিচার দিলাম তিনি যেন আমার ভাই হত্যার বিচার করেন। এর বেশি আর কিছু বলার নাই- হায়াত মউত তো আল্লাহর হাতেই।

রোগী মৃত্যুর বিষয় জানতে চাইলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. শরিফুল ইসলাম শরিফ বলেন, রোগীটি বুকে ব্যাথার চাপ নিয়ে আসছিল। প্রেসার নরমাল ছিল। আপনি কি কি ইনজেকশন রোগীর শরীলে প্রয়োগ করেছেন জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, অ্যালজিন, অ্যাবিস্টেট এবং ম্যাক্স প্রো ইনজেকশন ব্যবহার করা হয়েছে। রোগীকে কি ইসিজি করা হয়েছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, হ্যা ইসিজি করা হয়েছিল, রিপোর্টে ইসিজি খারাপ আসছে। রোগীর অবস্থা খারাপ দেখে প্রাথমিক ট্রিটমেন্টের পর রোগীকে ঢাকায় নিয়ে যেতে বলি অ্যাম্বুলেন্সে করে কিন্তু রোগীর স্বজনরা তা করেনি। পরে রোগী এখানেই মারা যান। রোগীর স্বজনদের অভিযোগ রোগী মৃত্যুর সাথে সাথে আপনি হাসপাতাল থেকে পালিয়েছেন এবিষয়ে কি বলবেন জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, পালিয়ে কেন যাব, ঔষধ পত্র প্রমাণাদী তো আছেই। আমরা সবাই ছিলাম কেউ পালাইনি। রোগীকে কোনো ভুল চিকিৎসা দেয়া হয়নি।

এবিষয়ে ডক্টরস হসপিটাল নামক ক্লিনিকটির পরিচালক ফজলু রহমান(শেয়ার হোল্ডার) সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, রোগীকে কোনো ভুল চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। নিহত লিটন দোকানদার বুকে ব্যাথা নিয়ে হসপিটালে আসছে। তার বুকে অনেক ব্যাথা হচ্ছিল বলে রোগী জানালে ডাক্তার তার ব্যাথা কমানোর জন্য ইনজেকশন প্রয়োগ করে তাকে ঢাকা নিয়ে যেতে বললেও তাকে ঢাকা নিয়ে যাওয়া হয়নি। তিনি মারা গেছেন। এই দোষ তো আমাদের না তাইনা!

টঙ্গীবাড়ী থানা অফিসার ইনচার্জ মোল্লা শোয়েব আলী বলেন, না রোগীর লোকজন কোনো অভিযোগ করেন নি। রোগী মৃত্যুর ঘটনায় হসপিটাল কর্তৃপক্ষ বা রোগীর স্বজনরা কোনো সহযোগিতা চেয়েছিল কি না জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, আমরা তো এই ঘটনার সংবাদ শুনেই সেখানে গিয়েছিলাম। সেখানে যার সহযোগিতা প্রয়োজন হবে তাকেই সহযোগিতা করার জন্য প্রস্তুত ছিলাম। সেটা হসপিটাল কর্তৃপক্ষের লাগলেও করব, রোগীর লোকজনের আইনগত সহযোগিতা লাগলেও করব। সেকারনেই আমরা ওখানে গিয়েছিলাম। এবং সেটিই করেছি।

সরেজমিনে গিয়েছিলেন- রোগীটি কেন মারা গিয়েছে এবং কর্তব্যরত চিকিৎসকের কোনো ভুল-ত্রুটি ছিল কিনা জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. প্রণয় মান্না দাস বলেন, প্রথম কথা হচ্ছে একটা রোগী তো এসব ক্লিনিক ডায়াগনিস্টিক সেন্টারে মারা যাবে। তার ম্যাগজিম হার্ট অ্যাটাক, আমাদের সিমটম গুলোতেই আমাদের মনে হচ্ছে। ডাক্তার বা কার ত্রুটি ছিল এটাতো সময় স্বাপেক্ষে তদন্ত করে তারপর বলা যাবে। কিন্তু আমরা রোগীর লোকদের কাছ থেকে কোনো অভিযোগ পাইনি। রোগী মৃত্যুর ঘটনায় রোগীর স্বজন বা হসপিটাল কর্তৃপক্ষ আপনাদের কোনো সহযোগিতা চেয়েছিল কি না জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, ক্লিনিক বা রোগীর লোকজন আমাদের কাছে কোনো সহযোগিতা চায় নি। আমরা ক্লিনিকটিকে বন্ধ করেছি ঐসময় ক্লিনিকের মালিক পক্ষ কেউ ক্লিনিকে ছিল না। ক্লিনিকটাতো আর অরক্ষিত অবস্থায় ফেলে রেখে আসতে পারি না। সেজন্য আমরা বন্ধ করে রেখেছি। উপজেলা স্বাস্থ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আপনার মতামত লিখুন :